মাদকাসক্তির লক্ষণ ও প্রতিকার

মাদকাসক্তি বা নেশা এমনই জিনিস যা আসক্তির সৃষ্টি করে। মদ, গাঁজা, বিড়ি, সিগারেট, চরস, তামাক, হেরোইন ইত্যাদি যাই হোকনা কেন তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে চট করে ছাড়া কঠিন হয়ে যায়। নেশার খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব এমনকি জীবন পর্যন্ত হারাতে হয় অনেক মানুষকে।
মাদকাসক্তির কারণ:
               মাদকাসক্তির কারণ অনেক, যেমন -মাদকের সহজলভ্যতা (মাদকের কাছে থাকা, সামনে থাকা)।
মাদকাসক্ত সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা করা কিংবা অতীতের মাদক গ্রহণের স্মৃতি মধ্যে ডুবে থাকা।
নেতিবাচক অনুভূতি, যেমন - ক্রোধ, বিষাদ, একাকিত্ব, অপরাধ-বোধ, ভীতি কিংবা উদ্বেগের জালে সেঁটে থাকা।
উৎসব উদযাপনের নামে দু-এক দিনের জন্য মাদক গ্রহণ করা।
দৈহিক উপসর্গ, যেমন- ব্যথা, জ্বালা-যন্ত্রনায় ভোগা।
হঠাৎ হাতে প্রচুর টাকা-পয়সা চলে আসা।
মাদকাসক্তির চিকিৎসা শেষে পুরো ভালো হয়ে গেছি, এখন এক-দুবার মাদক নিলে এমন আর কি হবে - এ ধরনের আত্মবিশ্বাসের ফাঁদে পা দেওয়া।

লক্ষণ:
           অধিকাংশ সময়ই বাবা-মা বুঝতে পারেন না তাদের সন্তান কখন কী অবস্থায় মাদকনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন তীব্র শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয় তখনই কেবল বুঝতে পারেন। অথচ একটু সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখলেই বাবা-মা বা পরিবারের লোকজন প্রাথমিক অবস্থায়ই বুঝে ফেলতে পারবেন তাদের সন্তান নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কি না? মাদকনির্ভরতার লক্ষণ এবং নমুনাগুলো যদি প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলা যায় তাহলে খুব সহজেই সন্তানকে স্নেহ ভালোবাসা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যা দিয়ে সুস্থ করে তোলা যায়।

পরিবারের কোনো সদস্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ শুরু করছে কি না তা বোঝার জন্য কতগুলো আচরণগত পরিবর্তন খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, যেমন -
হঠাৎ করেই স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন আসতে পারে৷ অন্যমনস্ক থাকা, একা থাকতে পছন্দ করা।অস্থিরতা প্রকাশ, চিৎকার, চেঁচামেচি করা।
অসময়ে ঘুমানো, ঝিমানো কিংবা হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া।
কারণে-অকারণে খারাপ ব্যবহার করা এবং অসংলগ্ন ও অস্পষ্ট কথাবার্তা বলা।
কোথায় যায়, কার সঙ্গে থাকে- এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিরক্ত হওয়া, গোপন করা কিংবা মিথ্যা বলা।
ঘর অন্ধকার করে জোরে মিউজিক শোনা।
নির্জন স্থানে বিশেষত বাথরুম বা টয়লেটে আগের চেয়ে বেশি সময় কাটানো।
রাত করে বাড়ি ফেরা, রাতজাগা, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা।
হঠাৎ নতুন অপরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করা।
বিভিন্ন অজুহাতে ঘন ঘন টাকা-পয়সা চাওয়া।
স্বাভাবিক খাবার-দাওয়া কমিয়ে দেওয়া।
অভিভাবক এবং পরিচিতদের এড়িয়ে চলা।
স্বাভাবিক বিনোদন মাধ্যমে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
বাড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রমাগত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়া।
ঋণ করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।


মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন:
যদি আপনার সন্তান বা পরিচিতজন অতিমাত্রায় মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে এবং পারিবারিকভাবে তাকে আর কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে। সামাজিক দুর্নাম কিংবা সম্মানহানির গ্লানিতে না ভুগে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রাখতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, নেশা ছাড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিক জোর। মন থেকে নেশার জন্য গভীর অনুতাপ ও অনুশোচনা এবং নেশা করার জন্য নিজের ওপর বাস্তবিক ধিক্কার না এলে শত ওষুধেও বা হাজার পরামর্শেও নেশা ছাড়া সম্ভব হবে না।
মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকার উপায়:
যে প্রেক্ষাপটগুলো মাদক গ্রহণের তীব্র ইচ্ছেটি জাগিয়ে তোলে, ধীরে ধীরে সেগুলোর মুখোমুখি হতে হবে৷ সুষ্ঠ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে ধীরে ধীরে ইচ্ছেটির তীব্রতা কমানো যায়।
নিজেকে বিনোদনমূলক, সৃজনশীল কিংবা উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করে এক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যায়।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কিংবা শাসনের যথাযথ শক্তি ধীরে ধীরে অর্জিত হয়৷ এ সময় প্রয়োজন বন্ধু ও পরিবারের সমর্থন এবং পরামর্শ।
{ছবিসূত্র : ৯৯৯ জরুরী সেবা}

Post a Comment

2 Comments

Thanks